মেহেদী হাসান শামীম, শেরপুর প্রতিনিধিঃ শেরপুর সদরের নবীনগরে দুই’শ বছরের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেলে রোয়া বিলে বসেছে এই মেলা। প্রতি বছর পৌষ মাসের শেষ দিনে বসতো এই মেলা। তবে বোরো ধান রোপন বিবেচনায় বিগত ক’বছর থেকে পৌষের মাঝামাঝি সময়ে মেলাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ঐতিহ্যবাহী এ পৌষ মেলাটি প্রায় দুই’শ বছরের অধিককাল থেকে শুরু হয়ে এখনো চলে আসছ বলে স্থানীয়দের দাবি। নবীনগর মেলা উদযাপন কমিটির আয়োজনে মেলায় প্রতিবছর ঘোড়দৌড়সহ গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা অনুুষ্ঠিত হয়। এবছরও আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এসেছেন অনেক ঘোড়সওয়ার।এছাড়াও মেলায় গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী মুখরোচক খাবার জিলাপি, মুড়ি, মোয়া, নিমকি, গজা, কলাই, বাদামের কটকটি, তিলের খাজার নিয়ে বসেছে বহু দোকানি। আরো বসেছে প্লাস্টিক, মাটির তৈরি খেলনা, প্রসাধনীসহ গৃহস্থালির পণ্যের দোকান। জেলা শহর এবং আশপাশের হাজার হাজার নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণি, শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী মানুষের ঢল নেমেছে মেলায়। মেলাকে ঘিরে পৌর এলাকার নবীনগরসহ আশেপাশের এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
দুইশ’ বছর ধরে চলে আসা এ মেলার আয়োজক কমিটির সমন্বয়কারী পৌর প্যানেল মেয়র জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম জানান, “আমাদের ঐতিহ্যবাহী এ মেলা প্রতি বছরই পালন করা হয়। আগামিতে ৩ দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হবে এবং ঐতিহ্যবাহী নানা খেলাধুলার আয়োজন করা হবে।”
জানা যায়, এক সময় পূর্ব পুরুষদের রেওয়াজ অনুযায়ী এলাকার মানুষ ভোরে উঠে হলুদ ও সর্ষেবাটা দিয়ে গোসল করতেন। বাড়ির মেয়েরা ব্যস্ত থাকতেন পিঠা-পায়েস তৈরিতে। দিনব্যাপী চলতো অতিথি আপ্যায়ন। তারই ধারাবাহিকতায় স্থানীয়দের বাড়িতে বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন আত্মিয়রা। তাদের আপ্যায়ন করত ঘরে ঘরে চলে পিঠা-পায়েস খাওয়ার উৎসব।
দুই নাতিকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসা শেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম হীরু বলেন, ” নবীনগরেই আমার বসবাস। ছোটবেলা থেকেই প্রতিবছর পৌষ মেলায় সপরিবারে ঘুরতে আসতাম। নানা গ্রামীণ খেলা উপভোগের পাশাপাশি সকলকে নিয়ে বাহারি খাবারও খেলাম। নাতিরা ঢাকায় বসবাস করলেও প্রাণবন্ত এই উৎসব উপলক্ষে শেরপুরে এসেছে। ওদেরকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসতে পারায় আনন্দ লাগছে, নাতিরাও খুবই খুশি হয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের কাছেও এই ঐতিহ্যবাহী মেলার আকর্ষণ এতটুকুইও কমেনি। আগামী প্রজন্ম এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখুক এই প্রত্যাশা করি।”