শীত মানেই পিঠা-পুলি আর গুড়ের মোহনীয় স্বাদ। আর সেই স্বাদে প্রতি শীতে শেরপুরের মানুষের জন্য যোগ হয় গুড়ের সন্দেশ। বিশেষ করে শীতকাল এলে গুড় দ্বারা তৈরি সন্দেশের কদর বেড়ে যায়। শহরের মিষ্টি দোকানগুলোতে ছানার পায়েস, মন্ডা ও অন্যান্য মিষ্টির সাথে বেচাবিক্রির তুঙ্গে থাকে এ গুড়ের সন্দেশ। এটি কেবল শীতকালেই পাওয়া যায়। তাই সারা বছর ধরে অপেক্ষায় থাকেন শেরপুরবাসী।
শেরপুরের মিষ্টি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শীত মৌসুমে বিভিন্ন উপজেলা থেকে শহরে আসা মানুষজন বাড়ি ফেরার সময় এ গুড়ের সন্দেশ নিয়ে যান। এছাড়া জেলার বাইরে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়াতে গেলেও এ সন্দেশের জুড়ি নেই।
জেলা ব্র্যান্ডিং স্টার্টআপ ‘আওয়ার শেরপুর’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও স্বত্বাধিকারী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, “গত ৩ বছর ধরে শেরপুরের ছানার পায়েস ও মন্ডার পাশাপাশি গুড়ের সন্দেশ অনলাইনে প্রচার ও বিক্রি করছি, আমাদের ক্রেতাদের অনেকেই সারা বছর গুঁড়ের সন্দেশের অপেক্ষায় থাকেন। বিশেষ করে যখন শীত ঘনিয়ে আসে তখন ক্রেতাদের অনেকে তুলশীমালা চাল বা ছানার পায়েস অর্ডার করার সময় গুড়ের সন্দেশের খুঁজ নেন। কেউ কেউ ওয়েবসাইটে প্রি-অর্ডার করে রাখেন।”
অনলাইন ক্রেতা মিফতাহুল জান্নাত তার ফেসবুক পেইজে লিখেছেন, “শেরপুরের গুড়ের সন্দেশ আমার খুব প্রিয় একটি মিষ্টি, যেটা আমি পাওয়া মাত্র খেতে কোনো দ্বিধা করি না। হালকা মিষ্টি বিধায় এটা খেতে অনেক বেশি মজার ও স্বাদ অতুলনীয়। আমার পরিবারের সবাই খুব পছন্দ করে।”
আইরিন আক্তার রিতা নামের একজন তার আইডিতে লিখেছেন, “মিষ্টির মধ্যে শেরপুরের গুড়ের সন্দেশ আমার ভীষণ পছন্দের তালিকায় স্থান করেছে। অনেক বছর পর সেই আগের মজাদার গুড়ের সন্দেশের স্বাদ খুঁজে পেলাম তাই প্রতি বছর অপেক্ষায় থাকি শেরপুরের গুড়ের সন্দেশের। তা হোম ডেলিভারি পাওয়ার সাথে সাথেই কন্যারা শেষ করে ফেলে।
শেরপুর নিউমার্কেট, গোয়ালপট্টি সহ শহরের প্রায় সব কয়টি মিষ্টি দোকানে পাওয়া যায় গুড়ের সন্দেশ। মূলত খাঁটি গুড়ের স্বাদ, হালকা মিষ্টি মানুষের কাছে এই মিষ্টিকে জনপ্রিয় করেছে।
এই মিষ্টি বানানোর পদ্ধতি হলো, প্রথম দুধ ফাটিয়ে ছানা করে নিতে হয়। তবে অবশ্যই ছানার কোয়ালিটি ভালো হতে হবে। তারপর তার সাথে খেজুরের গুড় মিশিয়ে ভালো করে করা জালে সেটাকে জাল করে আবার ঠান্ডা করে তারপর বরফি আকৃতি করে কেটে নিতে হয়। এ সন্দেশ ফ্রিজে রাখা ছাড়াও বেশ কয়েকদিন খাওয়া যায়।
এই গুড়ের সন্দেশের বিষয়ে শহরের নিউমার্কেট মোড়স্থ অনুরাধা মিষ্টান্ন ভান্ডার এর স্বত্বাধিকারী বাপ্পি দে জানায়, প্রতিবছর শীত এলে গ্রাহক এর চাহিদা মেটাতে আমরা খেজুরের গুড় দিয়ে এ সন্দেশ তৈরি করে থাকি। চিনি দিয়ে তৈরি সন্দেশ ডায়াবেটিকস রোগীরা এড়িয়ে চললেও গুড়ের সন্দেশটি চেখে নেয় অনেকেই। এই খেজুরের গুড়ের সন্দেশ শুধু শেরপুর এই নয়, শেরপুরের বাইরে অনেকেই তাদের আত্মীয় বাড়িতে নিয়ে যায়। অনেকেই আবার আগাম অর্ডার দিয়ে থাকে।