মেহেদী হাসান শামীম : শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকায় খাজা বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীর (মুর্শিদপুর পীরের দরবার) ও তাঁর অনুসারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ‘বাংলাদেশ ঈমান আক্বীদা সংরক্ষণ কমিটি’, শেরপুর জেলা শাখার আয়োজনে পৌরসভার গৌরীপুর এলাকার মারকাজুল উলুম মাদ্রাসার কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আয়োজক সংগঠনের সদস্য মুফতি খালিছুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনের কাছে চারটি দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে প্রশাসনিকভাবে দোজা পীরের দরবার স্থায়ীভাবে বন্ধ করা, দোজা ও তাঁর বাহিনীকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা, আহত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, নিহত কাঠমিস্ত্রি হাফেজ উদ্দিনের পরিবারকে এক কোটি টাকা ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা। সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রশাসনের কাছে অনতিবিলম্বে এসব দাবি পূরণ করার আহ্বান জানানো হয়। অন্যথায় বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে মুফতি খালিছুর রহমান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, শেরপুর জেলা শাখার সভাপতি মো. আব্দুল হালিম, ঈমান আক্বীদা সংরক্ষণ কমিটি, শেরপুর জেলা শাখার সদস্য আব্দুল আজিজ, ইত্তেফাকুল উলামার শেরপুর জেলা শাখার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি মিজবাহ উদ্দিন, ইন্দিলপুর হামিউস সুন্নাহ মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি শিহাব উদ্দিন, ইসলামি আন্দোলন শেরপুর জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ফারুক আহমাদ, হাফেজ মাওলানা তোফায়েল আহমেদ, মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, মুফতি আবুল বাসার সহ প্রিন্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
গত তিন দিন ধরে খাজা বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীরের দরবারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এরপর গত শনিবার সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের লছমনপুর, জামতলা, কুসুমহাটী ও কান্দাশেরীরচর এলাকার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত হয়। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি। আজ দরবার শরিফেও কাউকে যেতে দেখা যায়নি।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুবায়দুল আলম বলেন, বর্তমানে সার্বিক পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কাঠমিস্ত্রি হাফেজ উদ্দিনের মৃত্যু ও দরবার শরিফে পুনরায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার ভোরে পীরের দরবারে প্রথম হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ১৩ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে হাফেজ উদ্দিন (৪০) নামের এক কাঠমিস্ত্রি বুধবার ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। হাফেজ উদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার একদল লোক লাঠিসোঁটা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে পীরের দরবার শরিফে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় তাঁরা দরবারের বিভিন্ন স্থাপনা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং সেখানে থাকা মূল্যবান আসবাব, গবাদিপশু, কাঠ, টিন, ধান-চালসহ টাকা ও অসংখ্য গাছপালা কেটে লুট করে নিয়ে যায়।