শেরপুর প্রতিদিন ডট কম

Home ময়মনসিংহ বিভাগ শেরপুর জেলা শেরপুরে ‘রাখের উপবাস ও ঘৃত প্রদীপ প্রজ্জলন’ অনুষ্ঠিত
শেরপুরে ‘রাখের উপবাস ও ঘৃত প্রদীপ প্রজ্জলন’ অনুষ্ঠিত

শেরপুরে ‘রাখের উপবাস ও ঘৃত প্রদীপ প্রজ্জলন’ অনুষ্ঠিত

কারও কাছে ‘কার্তিক ব্রত’, কারও কাছে ‘রাখের উপবাস’ বা ‘গোসাইর উপবাস’। ব্রতকথার যে নামই হোক না কেন, বিপদ-আপদ, রোগবালাই থেকে মুক্তি পেতে ৯ নভেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় শেরপুরের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের লোকনাথ অনুসারী ও ভক্তরা ‘রাখের উপবাস ও ঘৃত প্রদীপ প্রজ্জলন’ পালন করেছেন। এ অনুষ্ঠানে শহরের রঘুনাথ জিউর মন্দির প্রাঙ্গনে জড়ো হয়েছিলো শত শত হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুণ্যাথী। হাজার হাজার প্রদীপ প্রজ্জলনে আলোকিত হয়ে উঠেছিলো মন্দির প্রাঙ্গণ। সেই সাথে নারীদের উলুধ্বনীতে মুখরিত হয়ে উঠে মন্দির প্রাঙ্গণ।
জানা গেছে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিয়মানুযায়ী প্রতি বছরের কার্তিক মাসের ১৫ তারিখের পর মাসের বাকি সময়ের প্রতি শনি অথবা মঙ্গলবার তারা এ ‘কার্ত্তিক ব্রত’ বা ‘রাখের উপবাস’ পালন করেন। তাই সারাদিন উপবাস পালনের পর প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শেরপুর জেলা শহরের মুন্সিবাজারস্থ রঘুনাথ জিউর মন্দির প্রাঙ্গনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বসেছিলো এমনি এক পূজা অর্চনা বা ‘রাখের উপবাস ও ঘৃত প্রদীপ প্রজ্জলন’। লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম ও মন্দিরে সামনে কয়েকশ নারী-পুরুষ প্রদীপ, ধুপ, ফল, ফুল সামনে নিয়ে একাগ্রচিত্তে লোকনাথের আরাধনায় নিমগ্ন হয়েছিলো। যতক্ষণ না পূজা শেষ না হয়, ততক্ষণ তারা ওই প্রদীপ জ্বালিয়ে বসে থাকেন আর নিজেদের মনবাসনা পূরণ করতে প্রর্থনা করেন।
ব্রত উদযাপনে আসা ভক্তরা জানান, এই ব্রতের আগের দিন সংযম করতে হয়। তারপর উপবাস থেকে সন্ধ্যায় আগে ধূপ, প্রদীপ ইত্যাদি নিয়ে বসতে হয়। আরাধনায় বসে প্রদীপ জ্বালানোর পর কথা বলা বন্ধ করে দিতে হয়। সংযম, মনোব্রত ও মনকে একাগ্রচিত্তে লোকনাথকে ডাকতে হয়। তারপর প্রদীপ নিভে যাওয়ার আগ মুহূর্তে পার্শ্ববর্তী পুকরে বাবা লোকনাথের নামে তা ভাসিয়ে দেয়া হয়।
লোকনাথ জিউর মন্দিরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি যাদব ঘোষ জানান, বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের হাত থেকে মুক্তি এবং আপনজনদের মঙ্গল কামনায় কার্তিক মাসে এ উপবাস পালন এবং আশ্রম প্রাঙ্গণে ঘিয়ের প্রদীপ ও ধূপ-ধুনা জ্বালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বাবা লোকনাথ। তাই এবারও অন্যান্য বছরের মতো আয়োজন করা হয়েছে এ ঘৃত প্রদীপ প্রজ্জলন।
শেরপুরের এই লোকনাথ মন্দির প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই এ পূর্জা অর্চনা হয়ে আসছে। তবে ১৯৮৬ সাল থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রতি বছর পালিত হয় এ ‘রাখের উপবাস ও ঘৃত প্রদীপ প্রজ্জলন উৎসব। এতে শত শত লোকনাথ ভক্তদের মিলন মেলায় পরিনত হয়।
শ্রী শ্রী রঘুনাথ জিউর মন্দির কমিটির সভাপতি শঙ্কর প্রসাদ সাহা জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আমরা প্রদীপ প্রজ্জলন এর আয়োজন করেছি। গত বছরের তুলনায় এবার লোকসমাগম অনেক বেশী হয়েছে। তাই আগামীতে আরও বড় পরিসরে আয়োজনের ব্যবস্থা করার চিন্তা ভাবনা করছি।
এ বিষয়ে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ আহ্বায়ক জিতেন্দ্র মজুমদার জানান, অন্যান্য বারের মতো এবারও আমাদের উপবাস শেষে ঘৃত প্রদীপ প্রজ্জলনে বক্তকুলরা বেশ সুসংঙ্খল ভাবে উপভোগ করেছে। বিকেল থেকে শুরু হওয়া রাত ৮ পর্যন্ত চলে এ ব্রত আয়োজন।
প্রদীপ প্রজ্জলন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক প্রদীপ রঞ্জন দে, মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র দে, যুগ্ম সম্পাদক কৃষ্ণ চক্রবর্তী, শেরপুর প্রেসক্লাবের কার্যকরী সভাপতি রফিক মজিদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি মুগনিউর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু হানিফসহ অন্যান্য মিডিয়াকর্মী এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিশু ও নারী-পুরুসসহ ভক্তকূলরা উপস্থিত ছিলেন।


LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

16 + seventeen =