শেরপুর প্রতিদিন ডট কম

Home ময়মনসিংহ বিভাগ শেরপুর জেলা অর্থাভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনিশ্চিত শ্রীবরদীর ফোরকানের
অর্থাভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনিশ্চিত শ্রীবরদীর ফোরকানের

অর্থাভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনিশ্চিত শ্রীবরদীর ফোরকানের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ১৪৯তম হয়েছেন শেরপুরের মো. ফোরকান আলী। দরিদ্র পরিবারে অভাব অনটন থাকলেও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল প্রবল। স্কুল থেকে এ পর্যন্ত ইটভাটায় কাজসহ দিনমজুরি করে নিজের খরচ নিজেই চালিয়েছেন। এবার দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-পড়ালেখা বাবদ খরচের কথা ভাবতে গিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে সহযোগিতার আবেদন করেছেন তিনি ও তাঁর অসহায় পরিবার।
সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে জানা যায়, শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার উত্তর খরিয়া এলাকার মো. আলতাব আলী ও মোছা. আজেদা বেগম দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ফোরকান সবার ছোট। বসতভিটা ছাড়া কোনো জায়গা-জমি না থাকায় দিনমজুরি এবং কিছু জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন আলতাব আলী। ফোরকানের বড় ভাই মো. ফরিদ আলী একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম বুথের সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন। ছোট থেকেই মেধাবী শিক্ষার্থী ফোরকানের অর্থাভাবে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সুযোগ হয়নি। তবে অদম্য প্রচেষ্টায় সব পরীক্ষাতেই ভালো ফলাফল করেছেন তিনি।
পরিবার ও এলাকাবাসী বলছে, নবম-দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে খেতে দিনমজুরের কাজও করেছেন ফোরকান। স্থানীয় খরিয়াকাজীরচর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে ভালো ফলাফলের পর শেরপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হন তিনি। বাড়ি থেকে দূরে হওয়ায় কলেজে যাওয়াটা কষ্টকর হয়ে পড়ে তাঁর জন্য। এ কারণে একটি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ শুরু করেন। পরে সেই টাকা জমিয়ে কলেজে যাওয়ার জন্য সাইকেল কেনেন ফোরকান। বাবার পক্ষে পড়াশোনার পুরো খরচ দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় নিজেই চালাতেন নিজের খরচ। ২০২৩ সালে এইচএসসিতে বাণিজ্য বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হন এবং শিক্ষাবৃত্তি লাভ করেন ফোরকান।
ফোরকান জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া তাঁর স্বপ্ন ছিল। এ কারণে শিক্ষাবৃত্তির টাকা এবং বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে ঢাকায় গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি শুরু করেন। ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় তিনি কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে মেধাতালিকায় ১৪৯তম হয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
ফোরকান আলী বলেন, ‘অভাবের সংসারে লেখাপড়ার খরচ জোগাতে মাঝে-মধ্যে আমিও খেতে-খামারে দিনমজুরের কাজ করেছি। মা-বাবার সহযোগিতা আর দোয়ায় কষ্টের সংসারেও এ পর্যন্ত এগিয়ে আসতে পেরেছি।’
নিজের স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার। এখন সেই সুযোগ পেলেও আর্থিক কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছি। তবে পড়ার সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে পররাষ্ট্র ক্যাডারে চাকরি করতে চাই।’
ছেলের স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতা চেয়েছেন ফোরকানের বাবা আলতাব আলী। তিনি বলেন, ‘আমি খুব অসহায় মানুষ। কিছু জমি বর্গা চাষ করে কোনোমতে চলি। এই বসতভিটাটুকু ছাড়া আমার আর কিছুই নাই। আমার ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগানো খুবই কষ্টকর ছিল। এ জন্য সে ইটভাটায় কাজ করেও নিজের খরচ চালিয়ে এ পর্যন্ত এসেছে। এখন আমি যে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করব, সেই অবস্থাটুকু আমার নাই। তাই আমি সবার সহযোগিতা চাই, যাতে আমার ছেলেটার স্বপ্ন পূরণ হয়।’
খরিয়াকাজীরচর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. হাসান বিন জামান ফোরকান সম্পর্কে বলেন, ‘ফোরকানদের অভাবের সংসারে খাওয়া-পড়ার খরচ জোগাড় করাই কঠিন। তারপরও নিজের আগ্রহের কারণে ফোরকান ধাপে ধাপে এগিয়ে আজ দেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এটা আমাদের স্কুলের জন্যও গর্বের। কিন্তু এখন সেখানে ভর্তি করার মতো আর্থিক অবস্থাও ফোরকানের পরিবারের নেই। তারা দিন আনে, দিন খায়। তাই ফোরকানের স্বপ্নপূরণে প্রয়োজন আর্থিক সহযোগিতা।’
নিজের আগ্রহের কারণে ধাপে ধাপে এগিয়ে দেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় খুশি এলাকাবাসীও। তাঁরা চান সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতায় ফোরকানের স্বপ্ন পূরণ হোক।
এ বিষয়ে শেরপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল্লাহ আল খায়রুম বলেন, ‘শিক্ষার্থী ফোরকান ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার কাগজপত্র নিয়ে আমার অফিসে এলে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে তাকে যতটুকু সম্ভব সহায়তা করা হবে।’


LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × two =