শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক মোশারফ হোসেনকে (৪০) হত্যা করে তার অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত মূলহোতাসহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি গ্রামের আব্দুল জুব্বারের ছেলে মো. আলমগীর হোসেন (২৪) ও একই উপজেলার কালাকুমা গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দিনের ছেলে মো. নুরুল ইসলাম (৬৫)। ১৭ মার্চ রবিবার দুপুরে শেরপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওই তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম পিপিএম-সেবা। অটোরিকশা চালক মোশারফ হোসেন কাকরকান্দি গ্রামের মো. সাফায়েতউল্লাহর ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, অটোরিকশা চালক মোশারফ হোসেন ও হত্যাকারী আলমগীর হোসেন একই গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশি। আলমগীর হোসেন পেশায় একজন ট্রাক্টর চালক। তিনি কিছুদিন আগে ঋণগ্রস্ত হয়ে কাজের সন্ধানে ঢাকায় যান। ঢাকায় বসেই আলমগীর পরিকল্পনা করেন যে, গ্রামের বাড়ি গিয়ে একটা অটোরিকশা ছিনতাই করে তা বিক্রি করে ঋণের টাকা শোধ করবেন। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী তার এলাকার পূর্ব পরিচিত অটোরিকশা চালক মোশারফ হোসেনকে টার্গেট করেন এবং গত ১৩ মার্চ রাতে তার অটোরিকশাটি ভাড়া করে কালাকুমা বাজারে নিয়ে যান। পরে ওই বাজার থেকে সিগারেট ও দুই বোতল জুস কিনে কৌশলে একটি বোতলে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে তা অটোরিকশা চালক মোশারফ হোসেনকে খাওয়ান।
এতে মোশারফ অজ্ঞান হয়ে গেলে আলমগীর তাকে অটোরিকশার পিছনের সিটে বসিয়ে ঘাকপাড় সড়কের ফাঁকা স্থানে নিয়ে গিয়ে মোশারফ হোসেনের গলায় থাকা গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে তার লাশ সড়কের পাশে জমশেদ আলীর ধান ক্ষেতে ফেলে দিয়ে অটোরিকশা ছিনতাই করে নিয়ে যান আলমগীর। পরে ছিনতাইকৃত অটোরিকশাটি প্রথমে ঝিনাইগাতী উপজেলার ফাকরাবাদ গ্রামে এক আত্মীয় বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন। পরবর্তীতে আলমগীরের খালু নালিতাবাড়ীর কালাকুমা গ্রামের মো. নুরুল ইসলামের অটোরিকশার ব্যাটারির সাথে চোরাই ৪টি ব্যাটারি বদল করেন। পরে ওই অটোরিকশার ৪টি ব্যাটারি ৩০ হাজার ৮শ টাকায় বিক্রি করেন আলমগীর।
এদিকে ১৪ মার্চ ঘটনাস্থল থেকে নিহত অটোরিকশা চালকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশ। ওই ঘটনায় ১৪ মার্চ নালিতাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। পরে ওই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযানে নামে পুলিশ। এরই ধারাবাহিকতায় নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল আলম ভূঁইয়া নেতৃত্বে এসআই কামরুল হাসান, এসআই আনোয়ার হোসেন সঙ্গীয় ফোর্সসহ অভিযান চালিয়ে ঘাতক আলমগীর হোসেন ও তার খালু মো. নুরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। পরে নিহত অটোরিকশা চালক মোশারফ হোসেনের ছিনতাই হওয়া অটোরিকশা ও ৪টি ব্যাটারি, ব্যাটারি বিক্রয়ের ৮ হাজার টাকা ও খালি জুসের বোতল উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আলমগীর ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। রবিবার দুপুরে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংকালে অন্যান্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. খোরশেদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মো. আরাফাতুল ইসলাম, ডিআইও-১ জাহাঙ্গীর আলম, নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল আলম ভুঁইয়া, প্রেসক্লাব সভাপতি রফিকুল ইসলাম আধার, সাধারণ সম্পাদক আদিল মাহমুদ উজ্জল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মেরাজ উদ্দিনসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।