পবিত্র রমজান মাসে বাজার সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুর ও চালে আমদানি শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে খেজুরে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ, চালে রেগুলেটরি ডিউটি ২০ শতাংশ, তেলে মূসক ৫ শতাংশ ও চিনিতে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পৃথক চার প্রজ্ঞাপনে এনবিআর জানিয়েছে, এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে।
রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে চাল, চিনি, তেল ও খেজুরে ভ্যাট ও শুল্ক কমানো হয়েছে। এর মধ্যে চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
পৃথক এক প্রজ্ঞাপনে ভোজ্যতেলের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে এনবিআর। এতে বলা হয়েছে, অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি টনে শুল্ক দেড় হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে। অপর দিকে রাজস্ব কর্তৃপক্ষ রমজান মাসের আরেক পণ্য খেজুরের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করেছে।
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি এসব পণ্যে শুল্ক কমানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন নিজ কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে এই নির্দেশ দেন তিনি। পরে বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, শুল্ক কতটুকু কমানো হবে, সেটি এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সিদ্ধান্ত নেবে।
এরও আগে ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরের ওপর আমদানি শুল্ক কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে নিত্যপণ্যের সরবরাহ, মজুত ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা সভায় এসব পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া চিঠিতে ভোজ্যতেলে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমানো এবং চিনিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া শুল্ক-কর কমানোর অনুরোধ করা হয়েছে খেজুরের ওপর।
চিনি আমদানিতে বর্তমানে পাঁচ ধরনের শুল্ক-কর রয়েছে। প্রতি টন অপরিশোধিত চিনিতে আগে আমদানি শুল্ক ছিল নির্ধারিত ৩ হাজার টাকা। গত নভেম্বরে তা কমিয়ে অর্ধেক, অর্থাৎ ১ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়। এর বাইরে অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি), ৩ শতাংশ অগ্রিম কর (এটি) এবং ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) রয়েছে।
পরিশোধিত চিনিতে বর্তমানে আমদানি শুল্ক নির্ধারিত ৩ হাজার টাকা, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, এআইটি ৫ শতাংশ, এটি ৫ শতাংশ এবং আরডি রয়েছে ৩০ শতাংশ। দুই ধরনের চিনিতে এ শুল্ক–কর কাঠামো ৩১ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই দুই ধরনের চিনি আমদানিতেই ৩০ শতাংশ আরডি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছে এনবিআরকে।
বর্তমানে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। বাকি ১৮ লাখ টন আমদানি করতে হয়। ভোজ্যতেল আমদানির ওপর বর্তমানে ভ্যাট রয়েছে ১৫ শতাংশ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এনবিআরকে এই ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার অনুরোধ করেছে।
ভোজ্যতেলের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সয়াবিন ও পাম তেলের ওপর ২০২২ ও ২০২৩ সালজুড়ে কয়েক দফায় ভ্যাট ছাড় দিয়েছে সরকার। সর্বশেষ ভ্যাট–ছাড় সুবিধা ছিল গত বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। আমদানি পর্যায়ে শুধু ৫ শতাংশ ভ্যাট ছিল। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ছাড়–সুবিধা বহাল রাখার অনুরোধ জানালেও এনবিআর আর তা মানেনি। এর ফলে বর্তমানে ভ্যাট ১৫ শতাংশই রয়েছে।
চলতি অর্থবছরে খেজুরের ওপর বেশি শুল্ক-কর আরোপ করা হয় বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছিলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবার তা কিছুটা আমলে নিচ্ছে। বছরে প্রায় ৫০ হাজার টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে, যার পুরোটা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে আমদানি করা হয়। খেজুরের মানও বিভিন্ন ধরনের। বর্তমানে খেজুরে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ এআইটি, ৫ শতাংশ এটি এবং ৩ শতাংশ আরডি রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এনবিআরকে জানিয়েছে, তুলনামূলক কম দামের খেজুরে যেন শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়।