শেরপুর পৌর শহরের গৌরীপুর মহল্লার বাসিন্দা এক ভুক্তভোগী নারী সিআর আমলী আদালতে চলতি বছরের ৩১ জুলাই মামলা দায়ের করেন কথিত কাজী রাজুর বিরুদ্ধে। মামলার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালত মামলার আসামি ও ভুয়া নিকাহ্ রেজিস্ট্রার রাজু আহম্মেদকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। রাজু আহাম্মেদ শেরপুর পৌরসভার মোবারকপুর মহল্লার মো. আফতাব উদ্দিনের ছেলে।
আদালত ও মামলা সূত্রে জানা যায়, জেলা শহরের পৌরসভার গৌরীপুর মহল্লার এক বাসিন্দার সরকারি চাকরিজীবী মেয়ের সঙ্গে একই মহল্লার আব্দুল হাকিমের ছেলে আবুল হাসনাত মো. রানার বিয়ে হয়। ২০০৫ সালের ৩০ মে রেজিস্ট্রেশন কাবিন মূলে উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের সময় স্বামীকে নগদ ৩ লাখ টাকাসহ আসবাবপত্র দেওয়া হয়। বিয়ের পর রানার সংসারে এক ছেলে সন্তান জন্ম নেয়।
এদিকে সরকারি চাকরিজীবী স্ত্রীর কাছে রানা বারবার যৌতুকের কথা জানায়। ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর ৫ লাখ টাকা এনে দেওয়ার জন্য স্ত্রীকে চাপ প্রয়োগ করে রানা। টাকার জন্য শারীরিক নির্যাতন, মারধর ও জখম করে স্বামী আবুল হাসনাত মো. রানা।
এ ঘটনায় নির্যাতিতা স্ত্রী নিরুপায় হয়ে শেরপুরের বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে যৌতুক লোভী স্বামী রানার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার পর আরও চড়াও হয় রানা। হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে রানা পৌরসভার ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ভুয়া কাজী রাজু আহম্মেদকে কাজে লাগান। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রাজু তাকে ভুয়া ও জাল তালাকনামা প্রস্তুত করে দেন। এদিক তালাক নামা পেয়ে ওই নারীর বাবা তৎকালিন জেলা রেজিস্টার হেলাল উদ্দিনের কার্যালয়ে গিয়ে খোঁজখবর নেন। এবং জানতে পারেন সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী ওই নিকাহ রেজিস্ট্রারের নাম নেই এমনকি সে বৈধ নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে গণ্য নয়।
পরে ভুক্তভোগী নারী ২০২২ সালের ৩১ জুলাই ওই ভুয়া কাজী মাওলানা রাজু আহাম্মেদ ও তার স্বামী আবুল হাসনাত মো. রানাসহ অপরাপর ৭ জনকে আসামি করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত এ মামলা সিআইডিকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। পরে তদন্তে মাওলানা রাজু আহম্মেদ ভুয়া কাজী হিসেবে সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করেন। রাজুর বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এরপর থেকেই রাজু পলাতক ছিলেন।
মঙ্গলবার আদালতে হাজির হয়ে তার আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন চাইলে আদালত তার জামিন নাকচ করে জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
অপরদিকে, ওই ভুয়া কাজী রাজু আহম্মেদের বিরুদ্ধে দেওয়ানী আদালতে একটি মামলায় চলতি বছরের ২৪ অক্টোবর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক কামরুল হাসান তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং সেই সঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন। এ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পর ভুয়া কাজী রাজু আহম্মেদ পলাতক ছিলেন বলে বলে আদালত সূত্র জানিয়েছে।