প্রতিদিনই দেশের সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অঞ্চলে ২০২২ সালের তুলনায় চলতি বছর দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখা বেড়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২২ সালে কুমিল্লা হাইওয়ে রিজিয়নে ৩২৭টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৪৭ জন, আহতের সংখ্যা ৩১৩। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ৩৪৭ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩০৬ জন, আহত হয়েছেন ৩৫৭ জন।
এ মহাসড়কের কুমিল্লা অঞ্চলে ২০২২ সালে যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছে এর মধ্যে ১৮১টি ঘটেছে বেপরোয়া গতির কারণে। সমীক্ষা থেকে জানা যায়, দেশে ৮৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ যানবাহনের বেপরোয়া গতি। বলা যায়, দেশের সড়কগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গণপরিবহণ খাতের সমস্যা ও করণীয় সম্পর্কে সবাই অবগত। কিন্তু দুঃখজনক হলো, পরিস্থিতির উন্নতি লক্ষ করা যাচ্ছে না। দেশে যানবাহনের তুলনায় চালক কম, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ-এসব সমস্যার বিষয়ে আলোচনা হলেও সমাধানের পথ খুঁজে বের করা হচ্ছে না।
সড়ক পরিবহণ খাতে শৃঙ্খলা জোরদার করার লক্ষ্যে এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছুদিন আগে ১১১ দফা সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল এ সংক্রান্ত কমিটি। প্রশ্ন হলো-সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হবে কবে? ২০১১ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছিল সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল। সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর লক্ষ্যে ওই কমিটি ৮৬ দফা প্রস্তাব দিয়েছিল, যার বেশির ভাগই চালক, যানবাহন ও সড়কসংশ্লিষ্ট সংস্কারের প্রস্তাব।
ওই কমিটির প্রস্তাবগুলোও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না কেন? ফিটনেসবিহীন যানবাহন কিংবা লাইসেন্স ছাড়া চালক যাতে সড়কে গাড়ি চালাতে না পারে, তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না কেন? ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযানসহ সড়ক ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে লোকবল কম, এ তথ্য আমরা জানি। তবে দুর্নীতি রোধে কর্তৃপক্ষ কঠোর হলে কম লোকবল নিয়েও বিভিন্ন ধরনের অভিযানে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া সম্ভব।
বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর হওয়া সত্ত্বেও ঢাকার সড়কে দুর্ঘটনা বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৫২টি দেশের ১ হাজার ২০০টির বেশি শহরের মধ্যে সবচেয়ে ধীরগতির শহর ঢাকা।
এ গবেষণায় যান চলাচলের গতিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গবেষণাটির ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী টাইমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এসব তথ্য থেকে দেশে সড়ক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
সম্প্রতি ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের কুতুবপুর এলাকায় ইমাদ পরিবহণের যে বাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল, সেই বাসের চালক তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। এক্ষেত্রে চালকের প্রয়োজনীয় বিশ্রামের বিষয়টি হয়েছে উপেক্ষিত। দুর্ঘটনা রোধে পরিবহণ শ্রমিকদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা এবং জীবনমান উন্নয়নেও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। যেভাবেই হোক, দূর করতে হবে সড়কের বিশৃঙ্খলা।