আগের বছরই তার হাত ধরে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট পরেছিল ইংল্যান্ডের মেয়েরা। সেই সারিনা ওয়েগম্যানই পরের বছর (২০২৩) বিশ্বকাপে শিষ্যদের ফাইনালে তোলেন। মেয়েদের ফুটবল বিশ্বকাপে তিনি সেরা কোচ কিনা সেই আলোচনাও চলছিল এরপর থেকে। তবে ইংলিশদের ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্পেন। শিরোপা খোয়ালেও উয়েফার বর্ষসেরা কোচের পুরস্কার জিতেছেন ইংলিশ ডাগআউটের দায়িত্বে থাকা ওয়েগম্যান। তবে সেই পুরস্কার তিনি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্প্যানিশদের উৎসর্গ করেছেন।
পরপর বড় দুটি টুর্নামেন্টে মুখোমুখি হয়েছিল স্পেন ও ইংল্যান্ডের মেয়েরা। সর্বশেষ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে ইংলিশরা বিদায় করে দিয়েছিল স্প্যানিশদের। এরপর চ্যাম্পিয়নের মুকুটও তাদেরই মাথায় ওঠে। এরপর মেয়েদের বিশ্বকাপে আবারও মুখোমুখি হয় দল দুটি। যেটি ছিল স্প্যানিশদের প্রতিশোধের মঞ্চ। তাতে সফলভাবেই উতরে গেছে স্পেন। ইংলিশদের হারিয়ে ফুটবল বিশ্বকাপের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে অ্যালেক্সিস পুতেয়াস ও জেনিফার হারমোসোরা।
তবে তাদের এমন গৌরবোজ্জ্বল অর্জনকে ম্লান করে দিয়ে আলোচনায় কেন্দ্র দখল করে রেখেছে বিতর্কিত এক ‘চুমু-কাণ্ড’। বিশ্বকাপের শিরোপা প্রদান অনুষ্ঠানে স্পেনের তারকা ফুটবলার হারমোসোকে নিজেদেরই ফেডারেশন সভাপতি লুইস রুবিয়ালেস উচ্ছ্বসিত হয়ে চুমু দিয়ে বসেন। যা নিয়ে পরবর্তীতে প্রতিবাদ জোরালো হলে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ওই ঘটনা সৃষ্টির কথা জানান রুবিয়ালেস। যদিও সেটি অস্বীকার করে ফুটবল প্রধানের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন হারমোসো। তার প্রতিবাদে শরিক হয়ে আরও ৮১ ফুটবলারও ফেডারেশনের অধীনে ফুটবল না খেলার ঘোষণা দেন।
পুরো ঘটনায় বেশ অস্বস্তিকর সময় পার করছে স্পেন। অথচ তারা প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের উচ্ছ্বাসে নিজেদের ভাসিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। ভুক্তভোগী এসব ফুটবলারদের মনোবেদনা অনুভব করছেন ইংল্যান্ড কোচ ওয়েগম্যান। সেরা কোচের পুরস্কার হাতে নিয়ে তিনি বলেন, ‘স্প্যানিশ দল নিয়ে কী ঘটছে, আমরা সবাই জানি। এটা একজন কোচ হিসেবে, দুই কন্যার মা হিসেবে, একজন স্ত্রী হিসেবে এবং মানুষ হিসেবে আমাকে ব্যথিত করছে।’
এরপরই নিজের পুরস্কার স্প্যানিশ ফুটবলারদের উৎসর্গ করার কথা জানান ওয়েগম্যান, ‘ফুটবল অনেক এগিয়েছে। তবে মেয়েদের ফুটবল ও সমাজের সামনে এগোনোর অনেক পথ বাকি আছে। এই পুরস্কার আমি স্পেন দলকে উৎসর্গ করতে চাই, যে দলটা বিশ্বকাপে দারুণ ফুটবল খেলেছে। এই দলটা উদ্যাপনের উপলক্ষ হওয়ার এবং তাদের কথা শোনানোর অধিকার রাখে। আমি ওদেরকে বড় করে হাততালি দিচ্ছি, আশা করি, আপনারাও যোগ দেবেন।’
ইতোমধ্যে বিতর্কিত সেই ঘটনায় রুবিয়ালেসকে ৯০ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আন্তর্জাতিক ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। যদিও এখনও বিতর্কিত এই স্প্যানিশ ফেডারেশনের সভাপতি পদত্যাগ করতে রাজি নন। তবে রুবিয়ালেসের ভবিষ্যৎ ফিফার ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন উয়েফা প্রধান আলেকজান্ডার চেফেরিন। রুবিয়ালেসের ঘটনাটি যৌন নিপীড়নের অপরাধ কিনা, তা নিয়ে এরই মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে দিয়েছে স্প্যানিশ প্রসিকিউটরা। তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্পেন সরকারও।