ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বাসিন্দা রায়হান কবির। তিনি বালিয়াডাঙ্গীর বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের পারুয়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। তার বাবা স্থানীয় একটি নন-এমপিও মাদরাসার সুপারিনটেনডেন্ট এবং মা গৃহিনী।
গত সোমবার (১৯ জুন) ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেখানে এক হাজার দু’শত শিক্ষার্থীর মধ্যে সে ৪৯তম মেধাক্রমে উত্তীর্ণ হয়েছেন রায়হান কবির। তার এ অর্জনে খুশি স্বজন, প্রতিবেশীরা ও শিক্ষকরা।
রায়হান কবির জানান, উপজেলার বালিয়াডাঙ্গী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও রংপুর সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ ৫ পেয়েছেন। তারপর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য ঢাকায় প্রস্তুতি কোচিং করে ঢাবি, গুচ্ছ এবং বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন রায়হান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (৫ জুন) ভর্তি পরীক্ষায় তিনি ৩৪৫তম মেধাক্রমে ভর্তির সুযোগ পান এবং গত (১০ জুন) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিষয়ে রায়হান কবিরের মেধাক্রম হয়েছে ৪৯তম।
রায়হান বলেন, স্কুলে পড়াশোনা সময় থেকেই শুনতাম ঢাবি অথবা বুয়েট থেকে পড়াশোনা করতে পারলে ভালো কিছু করা যায়। সেই আশাতে কঠোর পরিশ্রম করেছি। বাবা-মা, প্রতিবেশী এবং শিক্ষকদের দোয়ায় বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পাওয়া ১২’শ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৯তম হয়েছি। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সবার নিকট দোয়া চাই।
‘স্মার্টফোন থাকলেও সেটি অনলাইন ক্লাশের জন্য ব্যবহার করতেন রায়হান। ফেসবুক ব্যবহার করতেন সারাদিনে ৫-১০ মিনিট। সেটিও অনলাইন ক্লাসের লিংক পেতে। এছাড়া বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা এমনকি ঢাকায় থাকাকালীন সময়ে অভিভাবকদের সঙ্গে ১০-১৫ মিনিট ছাড়া বেশি কথা বলতেন না তিনি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অথবা বুয়েটের মত বড় প্রতিষ্ঠানে পড়তে হলে মাধ্যমিক থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে বলে জানান রায়হান।
রায়হানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নন-এমপিও একটি মাদরাসায় দীর্ঘদিন ধরে সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে কর্মরত আছি। চেষ্টা করেও বেতনভুক্ত হয়নি। স্বপ্ন ছিল কষ্ট করে হলেও ছেলেটাকে পড়াশুনা করাব। অভাবের সংসার হলেও ছেলেটাকে বাইরে পড়াশোনা করিয়েছি। ছেলের জন্য দোয়া করবেন, সে যেন পড়াশোনা শেষ করে মানুষ হয়, এলাকা এবং দেশের জন্য কিছু করতে পারে।
রংপুর সরকারি কলেজের (পর্দাথ) শিক্ষক সোহেল পারভেজ বলেন, রায়হান অনেক মেধাবী একজন ছাত্র। তাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি। তার এই অর্জন আমাদের প্রতিষ্ঠানের গর্ব।