শেরপুর প্রতিদিন ডট কম

Home ময়মনসিংহ বিভাগ শেরপুর জেলা শেরপুরে কাজুবাদামের হাতছানি
শেরপুরে কাজুবাদামের হাতছানি

শেরপুরে কাজুবাদামের হাতছানি

শেরপুর প্রতিনিধি: শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে এবার পরীক্ষামূলকভাবে উচ্চমূল্যের কাজুবাদামের চাষ হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব এলাকার বাগানগুলোর কাজুবাদাম পরিপক্ব হতে শুরু করেছে এবং চাষিদের মুখে হাসিও ফুটতে শুরু করেছে। ফলে সীমান্তের পাহাড়ি আদিবাসী-বাঙালিদের মনে আশার আলো জেগে উঠেছে। সেই সঙ্গে অবহেলিত ও প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরে যেতে পারে এ উচ্চ মূল্যের কাজুবাদাম চাষে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরত্বের এ সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় হাতির আক্রমণের ভয়ে এবং কিছু এলাকায় পানির অভাবে বিস্তীর্ণ জমি পতিত থাকে। তারা মনে করছে পাহাড়ি অনেক অনাবাদি জমিতে আমদানিনির্ভর এ কাজুবাদাম চাষ করলে দেশের অর্থকরীতে যোগ হবে নতুন ফসল। তেমনি স্থানীয় বেকারত্বের সমস্যার সমাধানসহ নতুন কর্মক্ষেত্রেরও শুরু হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক আগে থেকেই কাজুবাদামের চাষ হয়ে আসছে। তবে শেরপুরের গারো পাহাড়ি এলাকায় গত প্রায় ৩ বছর আগে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প’র আওতায় সীমান্তের ৩ উপজেলা  পাহাড়ি এলাকার সাড়ে ১৮ একর জমিতে মোট ৩৬টি প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে কম্বোডিয়ান-এম-২৩ জাতের এ কাজুবাদামের চারা বিতরণের মধ্য দিয়ে এ এলাকায় কাজুবাদাম চাষ শুরু করা হয়। গত প্রায় ৩ বছরের মাথায়ই বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী বাগানে ফুল ও ফল এসে ইতোমধ্যে বাদাম পাকতে শুরু করেছে। বাগানগুলোতে এখন থোকা থোকা ঝুলছে কাজুবাদাম। এ কাজুবাদাম গাছ থেকে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। আর প্রতি কেজি বাদাম বিক্রি করা যায় ৮ শত থেকে ১ হাজার টাকা। তবে প্রসেসিং ছাড়াগুলো ৪শ থেকে ৫শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা যায়। এ বাদাম পাকার পর ওপরের অংশ আপেলের মতো খাওয়া যায় এবং নিচের অংশ নির্ধারিত যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় বাদাম বের করা হয়ে থাকে।

শেরপুরের এ পাহাড়ি মাটি খুবই উৎকৃষ্ট হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই গাছগুলোতে বাদাম আসতে শুরু করেছে এবং আগামীতে আরও ফলন বাড়বে বলে আশা করছে বাগানমালিকরা। এদিকে গারো পাহাড়ে আমদানিনির্ভর এ উচ্চমূল্যের কাজু বাদামের চাষ হচ্ছে এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় অনেকে কৃষি উদ্যোক্তা ও বেকার যুবক বাগান দেখতে ছুটে আসছে এবং তারাও বাণিজ্যিকভাবে এ লাভজনক কাজুবাদাম চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছে। তবে কেউ কেউ হাতির আক্রমণের ভয়ের কথাও জানিয়েছে। যদি কাটা তারের বেড়া দিয়ে এবং হাতির আক্রমণ ঠেকানো যায়, তবে এ কাজুবাদাম চাষে স্থানীয়দের অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভবান করে দেবে বলে কৃষি বিভাগ ও স্থানীয়রা জানায়।

এ বিষয়ে ঝিনাইগাতি উপজেলার গজনি এলাকার এক বাগান মালিক সোয়েব হাসান সাকিল বলেন, কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছে, তারই ধারাবাহিকতায় কৃষি বিভাগের এ পাইলট প্রকল্প হচ্ছে এ কাজুবাদাম চাষ। আমার বাগানে গত বছর থেকেই ফুল আসতে শুরু করে এবং এবার ফুল ও ফল হয়ে পাকতে শুরু করছে। আমার ৫০ শতক জমিতে ২ শত গাছ রয়েছে। গত তিন বছরে আমার সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি, আগামী বছর থেকে ফলন আরও বাড়বে এবং প্রতি গাছে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কেজি করে বাদাম পাওয়া যাবে। এতে ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে বাদাম বিক্রি করা যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, উচ্চ মূল্যের এ কাজুবাদাম দেশের নতুন অর্থকরী ফসল। কৃষি বিভাগের মাধ্যমে কাজুবাদামের উৎপাদন বাড়ানোর প্রকল্প নেয়া হয়েছে। দেশে এ ফসলের অনেক ঘাড়তি রয়েছে। প্রতি বছর এই আগাম আমদানি করতে প্রচুর টাকা ব্যয় করতে হয়। এই আমদানি নির্ভরতা কমাতে এবং বাংলাদেশকে সমৃদ্ধি করতে নতুন এ ফসলকে শেরপুরের গারো পাহাড়সহ পুরো দেশে ছড়িয়ে দিতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে। তবে হাতির উপদ্রবের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে কৃষকদের মাঝে কাজুবাদাম চাষ বেশ সাড়া ফেলবে।


LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

thirteen − seven =