নিজস্ব প্রতিনিধি : জামালপুরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত নির্ভিক সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম স্মরণে শোকসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (১৯ জুন) দুপুরে জামালপুর প্রেসক্লাব আয়োজিত জামালপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে নিহত সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম স্মরণে শোকসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে নিহত সাংবাদিক নাদিমের পরিবারের সকল সদস্য ও জেলায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা’র সভাপতিত্বে শোকসভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট ওয়ারেছ আলী মামুন, সেক্টরস কমান্ডার ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ-৭১ এর জেলা শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশিদ, জামালপুর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মোঃ সুরুজ্জামান, জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, দৈনিক সচেতন কন্ঠের সম্পাদক বজলুর রহমান,২৪চ্যানেল ও সমকালের সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন মিন্টু,কালের কন্ঠের সাংবাদিক মোস্তফা মঞ্জু,ইত্তেফাকের সাংবাদিক এসএমএ হালিম দুলাল,মানবকন্ঠের সাংবাদিক কাফি পারভেজ,বাংলাভিশন টিভির জাহিদ হাবিব,৭১টিভির আনসারী সুমন,
জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত জামান, সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া জাহাঙ্গীর ও নিহত নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম প্রমুখ।
ব্ক্তারা প্রত্যেকেই সাংবাদিক নাদিমকে হত্যা মামলার এজাহার ভুক্ত ২২জন আসামীর মধ্যে র্যাব কর্তৃক ৪ জন আসামী গ্রেফতার হয়েছে। আবশিষ্ট ১৭জন আসামীর মধ্যে একজন আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকদের বক্তব্যে শোকসভাটি প্রতিবাদ সভায় পরিণত হয়। তাই সাংবাদিকরা পুলিশের বিরোদ্ধে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ।
জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, রাজাকার পরিবারের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় গত ১১ এপ্রিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীনা বেগমের ইন্ধনে তার সন্ত্রাসী বাহিনী সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলা করেছিল। এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ এবং ভিডিওবার্তায় নিরাপত্তাহীনতার কথা বললেও ওসি সোহেল রানা সে সময় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ১৪ জুন ফের তিনি বাবু চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হলে ঘটনাটি ‘চোখে সামান্য আঘাত লেগেছে’ বলে ওসি মন্তব্য করেন এবং নিহত হওয়ার পরও ওসির ভূমিকা রহস্যজনক।
চ্যানেল ২৪ ও দৈনিক সমকালের স্টাফ রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন মিন্টু বলেন, এ পর্যন্ত ১৩ জন আসামী গ্রেফতার হলেও এজাহারভূক্ত আসামী গ্রেফতার হয়েছে মাত্র ৫ জন। এরমধ্যে প্রধান আসামী বাবু চেয়ারম্যানসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। সাংবাদিক নাদিম হত্যাকান্ডে পুলিশের অভিযান ব্যর্থ। ওসির ভূমিকা রহস্যজনক হলেও তাকেই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা করায় সাংবাদিক নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, সাংবাদিক নাদিমের হত্যাকারী বাবু চেয়ারম্যানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চাচাতো ভাই সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেছুর রহমান পান্না এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীনা বেগমের ইন্ধন থাকলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে। তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকরা নিহত সাংবাদিকের পরিবারের যাবতীয় দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। এছাড়া সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান। শোকসভায় সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নিহত সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বলেন, আমি যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করতে চাই এবং আমার স্বামী হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো সাংবাদিককে এভাবে প্রাণ হারাতে না হয়। প্রত্যেক বক্তার অভিযোগ বকশীগঞ্জ থানার ওসি সোহেল রানার ভূমিকা হত্যাকারীদের পক্ষাশ্রিত হওয়ায় তাকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান।
সাংবাদিক নাদিম হত্যার ঘটনায় বকসিগঞ্জের সাধুর পাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সোমবার (১৯ জুন) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়টি জানানো হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ওই হত্যাকান্ডের ঘটনায় স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে তাকে চূড়ান্ত ভাবে কেন অপসারণ করা হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পত্র প্রাপ্তির ১০ (দশ) কার্য দিবসের মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত এক নথিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম সোমবার স্বাক্ষর করেন। চেয়ারম্যান পদ থেকে বাবুর বরখাস্তে বিষয়ে জামালপুরের স্থানীয় সরকারবিভাগ (ডিডিএলজি) ফোন বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। তবে জামালপুর জেলা প্রশাসক শ্রাবস্তী রায় এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রেরণ করেছি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থ্যা গ্রহন করবেন। তিনি আরো বলেন,বরখাস্ত হয়েছে কি ’না আমি একনও জানতে পারিনি,তবে জানলে আপনাদের অবহিত করা হবে বলে জানান।
জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যা মামলার দ্বিতীয় আসামি ফাহিম ফয়সাল রিফাত (২৩) ঘটনার ৪ দিনেও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদিকে পিস্তল হাতে রিফাতের ছবি ভাইরাল হওয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। রিফাত নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর ছেলে। সে বকশীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক।
স্থানীয়রা জানান, সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিমের ওপর হামলার সময় সে সরাসরি অংশ নেয়। তখন রিফাত নাদিমের মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে। ইউপি চেয়ারম্যান বাবার মতো রিফাতও মাদক, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
বকশীগঞ্জ থানার ওসি সোহেল রানা বলেন, পিস্তল হাতে রিফাতের ছবিটি দেখেছি। গ্রেপ্তারের পর আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে গত বুধবার (১৪ জুন) রাতে বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি এলাকায় বাবু চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার শিকার হন বাংলানিউজ২৪ ডটকমের জেলা প্রতিনিধি ও জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সহসভাপতি নাদিম। পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ৩টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে শনিবার বকশীগঞ্জ থানায় সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুসহ ২২ জনের নামে এবং আরো অজ্ঞাত ২০/২৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলার প্রধান আসামি চেয়ারম্যান বাবুসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত সব আসামি বিভিন্ন মেয়াদে পুলিশ রিমান্ডে আছে।
