মুহাম্মদ আবু হেলাল, শেরপুর প্রতিনিধি : সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলা (উত্তর) গারো পাহাড়ি অঞ্চলে লটকন চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। শুধুমাত্র ঝিনাইগাতীতেই ইতোমধ্যেই গড়ে উঠেছে ২০টি লটকন বাগান। অনুরুপভাবে বাড়ছে শেরপুর, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ীতে লটকন চাষ। বাড়তি খরচ না থাকায় এবং অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় লটকন চাষ বাড়ছে দিন দিন। বাণিজ্যিকভাবেই চলছে লটকন চাষ। বাড়তি খরচ না থাকায় অনেকেই লাভের মুখ দেখছেন। আশানুরুপ ফলন হওয়ায় চাষিদের আগ্রহ যেমন বাড়ছে তেমনই দ্রুত প্রসার ঘটছে লটকন চাষের।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজলোর নলকুড়া ইউনয়িনরে ভারুয়া গ্রামের লটকন চাষি ইউপি সদস্য মো. হামিদুল্লাহ ১৩/১৪ বছর আগে তার বাগানে ১২০টি লটকন চারা রোপণ করেন। ৭/৮ বছর পরই ৩৫টি গাছে ফল দিতে শুরু করেছে। বছরে ৬০-৭০ হাজার টাকার লটকন বিক্রি করছেন হামিদুল্লাহ। লটকন চাষে লাভের মুখ দেখছনে তিনি। একই গ্রামের অপর চাষি আলাউদ্দিন ১০-১১ বছর আগে লটকনের বাগান করে ২০০ গাছ রোপণ করে ৫/৬ বছর যাবৎ ৬০-৭০টি গাছে লটকন ধরেছে। প্রতি বছর তার বাগান থেক ৬০/৭০ হাজার টাকার লটকন বিক্রি করছেন তিনি। বাড়তি কোন খরচ না থাকায় লাভের মুখ দেখছন তিনিও। অপর দিকে গারো পাহাড়ে এমনিতে বেড়ে ওঠা পাহাড়ি ঐতিহ্যবাহী লটকন ফল এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। লটকন অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি পাহাড়ি ফল। অমøমধুর স্বাদের অত্যন্ত মুখরোচক ফল হিসেবে সবার কাছেই অত্যন্ত সমাদৃত। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় গারো পাহাড়ে ইতোপূর্বে প্রচুর লটকন গাছ দেখা যেতো। কিন্তু কালক্রমে ব্যাপক বৃক্ষ নিধনে লটকন গাছও রেহাই পায়নি। ফলে হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী লটকন ফলদ গাছ। তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে লটকন বাগান গড়ে উঠায় কৃষক যেমন লাভবান হচ্ছেন। তেমনি ফলের চাহিদা মিটছে।
জানা যায়, লটকন গাছে শীতের শেষে ফুল আসে এবং জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে লটকন পাকে। এ সব লটকন গাছের চাষও করা যায়। যে কোন ফলের চেয়ে অনেক লাভজনক লটকন বাগান। প্রবীণ ব্যক্তিত্ব শতবর্ষী ডা. আব্দুল বারী ও আলহাজ্ব শরিফ উদ্দিন সরকার বলেন, দেশীয় যে কোন ফলের চেয়ে লটকনের ফলন এবং বর্তমান বাজার মূল্য অনকে বেশি। তাই এ ফল চাষে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। তাছাড়া এই লটকনের চাষ বা গাছ রোপণরে ক্ষেত্রে জমিরও কোন বিশেষ যতœ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। যে কোন ধরণের জমিতে যেমন পতিত, অনুর্বর, অনাবাদি জমিতেই লটকনের চাষ বা গাছ রোপণ করে ভাল ফলন পাওয়া সম্ভব।
ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন দিলদার বলেন, উপজেলার কাংশা এবং নলকুড়া ইউনিয়নে ২০টি লটকন বাগান গড়ে উঠেছে। লটকন চাষিদের কৃষি বিভাগ নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে এ পর্যায়ে এনেছেন। পহাড়ি পুষ্টিকর ফল হিসেবে কৃষি বিভাগ লটকন চাষে চাষিদের উদ্বোদ্ধ করছে। আর তাই দিন দিন বাড়ছে লটকন চাষ।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ বলেন, লটকন চাষিদের কৃষি বিভাগ নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। পহাড়ি পুষ্টিকর ফল হিসেবে কৃষি বিভাগ লটকন চাষে চাষিদের উদ্বোদ্ধ করছে। আর তাই দিন দিন বাড়ছে লটকন চাষ।