শ্রীবরদী প্রতিনিধি: শেরপুরে প্রত্যন্ত পল্লিতে দড়িতে বাঁধা অবস্থায় দিন পার হচ্ছে ৮ বছর বয়সের মানসিক ভারসাম্যহীন ইতি মনি নামে এক শিশুর। যে বয়সে গ্রামের দিগন্তজুড়ে ছুটে বেড়ানোর কথা এবং বইখাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা সেই বয়সে বন্দি জীবন কাটাচ্ছে ইতি মনি। হতদরিদ্র বাবা ইব্রাহিম পেটের তাগিদে ঢাকায় দিনমজুরের কাজ করেন। গ্রামের বাড়িতে মা এবং বৃদ্ধ দাদি ইতি মনিকে না হারানো এবং জীবন সংকটের হাত থেকে বাঁচাতে বাধ্য হয়েই দড়িতে বেঁধে রাখতে হচ্ছে ছোট্ট ইতি মনিকে। আত্মীয়স্বজন এবং গ্রামবাসীও এ করুণ দৃশ্য দেখে আফসোস করা ছাড়া আর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না।
জানা গেছে, শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলার ভেলুয়া ইউনিয়নের ভেলুয়া গ্রামের দিনমজুর ইব্রাহিমের কন্যা ইতি মনি জšে§র পর ৩ বছর ভালোই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ৩ বছর বয়স পর থেকে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে ইতি মনি। নিজের শরীর নিজেই কামড়ে ক্ষত তৈরি করার পাশাপাশি বাড়ি ছেড়ে সামনের পুকুর ও মেইন রাস্তা ধরে অজানা উদ্দেশে চলে যেত। বাবা পেটের তাগিদে ঢাকায় থাকার কারণে গ্রামের বাড়িতে ইতি মনির মা ও বৃদ্ধ দাদি তাকে বেশিক্ষণ চোখে চোখে রাখতে পারছিল না। দু’বার পুকুরে পড়ে যায় এবং হারিয়েও যায় দু’বার। ফলে বাধ্য হয়েই ইতি মনির জীবন সংকটাপণ্যের হাত থেকে বাঁচাতে প্রথম অবস্থায় লোহার শেকলে বেঁধে রাখতে হতো। কিছুদিন তাদের সর্বস্ব দিয়ে চিকিৎসা করলে কামড়ানোর স্বভাব দূর হলেও আস্তে আস্তে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলে। ডান হাতও অবশ হয়ে পড়ে। নির্বাক চোখে শুধু তাকিয়ে থেকে বাম হাত দিয়ে মাটিতে বসে খেলা করতে থাকে। বাড়ির উঠানে খুঁটিতে ঘিরেই তার জীবন চলছে। এ অবস্থায় ইতি মনির মা-বাবা হাল ছেড়ে দিয়ে মেয়েকে নিজেদের কাছে রাখতে এবং অমানবিকভাবে শেকলে বেঁধে রাখা থেকে দড়িতে বেঁধে রাখেন। অর্থাভাবে দুই বছর ধরে চিকিৎসাও বন্ধ করে দেন তারা।
ইতি মনির এ অমানবিক অবস্থা দেখে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী অসহায়ত্বের কথা জানান। তারা জানান, দরিদ্র ইব্রাহিমের পক্ষে তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না। দাদি রোকেয়া বেগম কান্নারত অবস্থায় জানান, নাতিটার চিকিৎসার জন্য যদি সরকার এগিয়ে আসে তবে ভালো হতো।
এদিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল করিম নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে ইতি মনির চিকিৎসার জন্য সমাজের অবস্থাশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এদিকে শেরপুরের শিশু ও কিশোর বিশেষজ্ঞ এবং শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাইফুল আমীন জানান, শিশুটিকে দেখলে বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পারলে ভালো বলা যেত। প্রাথমিকভাবে তার ভিডিও চিত্র দেখে মনে হচ্ছে, নিউরোলজিক্যাল ডিজিস হতে পারে। তবে উন্নত চিকিৎসা পেলে শিশুটি অবশ্যই তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে।