শেরপুর প্রতিনিধি: জেলায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। যুব সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে ও গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতেই এমন আয়োজন। ১ জুন শুরু হওয়া এ খেলার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে আজ।
প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন শেরপুর, জামালপুরসহ বিভিন্ন উপজেলার গরুর মইয়ের দল। হাজারও দর্শক প্রতিযোগীদের উৎসাহ দিতে উপস্থিত হন হেরুয়া নিজপাড়া মাঠে। এমন আয়োজন দেখে খুশি দর্শনার্থীরা।
শেরপুর সদরের চরশেরপুর হেরুয়া নিজপাড়ার কৃষি মাঠে হয় ঐতিহ্যবাহী গরুর দৌড়রের প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা ঘিরে পুরো এলাকাজুড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। বসে ছোট ছোট ভ্রাম্যমাণ দোকানও। আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার দর্শক অংশ নেয় এ খেলা দেখতে।
সরেজমিনে খেলার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, চারটি ষাঁড় ও গরুর সঙ্গে মই নিয়ে তৈরি একটি দল। গরুগুলো জোঁয়ালে বাঁধা থাকে। নাম গরুর দৌড় হলেও দলে দু’জন মানুষও থাকে নিয়ন্ত্রক হিসেবে। দৌড় শুরু হলে, উৎসুক জনতা চিৎকার ও হাততালি দিয়ে উৎসাহ দেয় পছন্দের দলকে।
এদিকে প্রতি বছর এই সময়ে জেলার বিভিন্ন জায়গার এমন আয়োজন হলেও এবারই প্রথম গরুর এমন অভিনব প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে হেরুয়া নিজপাড়া যুব সমাজ। তাইতো হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার এই খেলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসে হাজারও দর্শনার্থী।
গরুর মই দৌড় দেখতে আসা শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজিরচরের বাসিন্দা আমজাদ আলী (৭২) বলেন, আগে ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশিগঞ্জ, শেরপুরের হেরুয়া, কামারের চর, ডুবার চরসহ বিভিন্ন চরে মই দৌড় খেলা প্রতিবছর হতো। আমরা পাড়ার অনেকেই বাইকেল চালিয়ে চলে যেতাম। কিন্তু বাপু, এখন আর সেদিন নেই। নানান কারণে এসব গ্রামীণ খেলা আর হয় না। এসব খেলা ফিরিয়ে আনলে, সামাজিক মূল্যবোধ ও হারানো সংস্কৃতি রক্ষা পাবে।
খেলা দেখতে এসেছেন শেরপুর পৌর শহরের নাগপাড়া মহল্লার বাসিন্দা পুরোহিত বাবু চক্রবর্তী (৫০)। তিনি বলেন, আগে অনেক মই দৌড় হতো। এখন আর আগের মতো হয়। খবর পেয়ে আমি এসেছি। গ্রাম বাংলার এ খেলাটি অত্যন্ত চমৎকার এবং আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যেন মিশে আছে এ মই দৌড়।
তরুণ প্রজন্ম এমন প্রতিযোগিতা দেখে আনন্দিত। তারা জানান, ঐতিহ্যবাহী এসব খেলা বেশি বেশি হওয়া দরকার।
সদরের চরশেরপুর ইউনিয়নের নাগপাড়া হতে পরিবারের সঙ্গে এসেছেন স্কুল শিক্ষার্থী সাবিনা বিনতে নূরী। তিনি বলেন, এবারই প্রথম আমি মই দৌড় খেলা দেখলাম। গরু দৌড় দিলে দেখতে অনেক মজা লাগে, যা বলে বোঝানো সম্ভব না। আমি চাই, এমন আয়োজন প্রতিটি ইউনিয়নে যেন করা হয়।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শামসুল হক বলেন, বাপ দাদার আমল থেকেই এ খেলায় যুক্ত তারা। জনগণকে আনন্দে-উল্লাস দিতেই তারা এসব বড় বড় এবং শক্তিশালী ষাড় লালনপালন করেন। তবে তিনিও জানালেন, আগের মতো আর খেলার আয়োজন এখন আর হয় না।
আয়োজক কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান তালুকদার বলেন, এসব গ্রামীণ খেলা হারানোর পথে। সচরাচর আয়োজন করা হয় না। যুব সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে ও নতুন প্রজন্মের কাছে ঐতিহ্যবাহী এ খেলা তুলে ধরতেই এমন আয়োজন। আগামীতেও অব্যাহত থাকবে এ মই দৌড় প্রতিযোগিতা।
রোববার (১১ জুন) চরশেরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম রেজা বলেন, এমন আয়োজনের স্বাক্ষী হতে পেরে আমরা আনন্দিত।
সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা রোববার বলেন, আমাদের গ্রাম বাংলার এমন ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমার পক্ষ হতে সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।