মাহবুবা রহমান আঁখির মৃত্যুর পর থেকেই রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত সেন্ট্রাল হসপিটালের পরিচালকসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালে রিসিপশনের তিন-চার জন কর্মচারী ব্যতীত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেখা যায়নি।
রোববার (১৮ জুন) রাতে হাসপাতালটি ঘুরে এবং হাসপাতালে নিযুক্ত কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সন্ধ্যায় ৭টায় হাসপাতালের গেটের সামনে জাগ্রত বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন ডা. সংযুক্তা সাহার গ্রেপ্তার চেয়ে মানববন্ধন করে। এ সময় হাসপাতালে সিকিউরিটি গার্ড ও রিসিপশনে কয়েকজন কর্মচারী ছাড়া কেউ ছিলেন না। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. একেএম মাসুদ পারভেজের কক্ষ খোলা থাকলেও তাকে দেখা যায়নি। তার পরিচয় লুকাতে নেম-প্লেটটিও খুলে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।
হাসপাতালে কে কে আছে জানতে চাইলে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সিকিউরিটি গার্ড বলেন, কয়েকজন রোগী আছে। বড় কোনো কর্মকর্তা নেই। দুপুরের দিকে মাসুদ স্যার (সহকারী পরিচালক) বের হয়ে গেছেন। আর কোনো স্যারকে ঢুকতে দেখিনি।
প্রসঙ্গত, রোববার (১৮ জুন) দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে মারা যান মাহবুবা রহমান আঁখি।
জানা গেছে, গত তিন মাস ধরে সেন্ট্রাল হসপিটালের গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন মাহবুবা রহমান আঁখি। তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল বলে চিকিৎসক জানিয়েছিলেন। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমেই সন্তান প্রসব সম্ভব বলে তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন ডা. সংযুক্তা সাহা।
প্রসব ব্যথা ওঠায় গত শুক্রবার (৯ জুন) রাত ১২টা ৫০ মিনিটে সেন্ট্রাল হসপিটালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি করা হয় আঁখিকে। তখন ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না। তারপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) কাজ করছেন।
এ বিষয়ে আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্ত্রীকে যখন ওটিতে ঢোকানো হয় এবং নরমাল ডেলিভারির জন্য চেষ্টা শুরু করা হয়, তখনও আমি সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে আছেন কি না জানতে চাই। কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং তিনি চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরে জানতে পেরেছি ডা. সংযুক্তা সাহা ছিলেন না এবং তারা রোগীর কোনোরকম চেক-আপ ছাড়াই ডেলিভারির কাজ শুরু করে দেন।
এদিকে, ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় বুধবার ধানমন্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র একটি মামলা দায়ের করেন ইয়াকুব আলী। মামলায় ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা, ডা. মুনা সাহা, ডা. মিলি, সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজকে আসামি করা হয়। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকেও আসামি করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর ১৫ জুন রাতে ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনা সাহাকে হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।